ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

অর্থনীতির স্বার্থেই আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে

দৈনিক মার্তৃভূমির খবর
আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৪ ১২:৫৫:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৪ ১২:৫৫:২৬ অপরাহ্ন
অর্থনীতির স্বার্থেই আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে, তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ও বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রী পর্যায়ের উপদেষ্টাদের মাঝে দু’জন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কও আছেন। আগামীকাল রোববার তাদের প্রথম কার্যদিবস।

স্বভাবতই মানুষ বড় কিছু আশা করছে বিশ্বব্যাপী সম্মানিত নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সরকারের কাছে। এক কথায় বলতে গেলে মানুষ শান্তি চায়, কারণ ভয়ংকর অশান্তি বিরাজ করছে পুরো দেশে। এমন কোনো জনপদ নাই যেখানে হামলা, লুটতরাজ আর অগ্নিসংযোগ হচ্ছে না। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশব্যাপী কত মানুষকে জিঘাংসায় হত্যা করা হলো, কত বাড়িঘর পোড়ানো হল, কত লুট হলো, কত নিপীড়ন হলো সেগুলো হয়তো কোনোদিনই জানা যাবে না। কারণ তেমন কোন খবর হচ্ছে না সংবাদ মাধ্যমে। তেমনিভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো না আন্দোলন কতজন শহীদ হয়েছিলেন।

তাই নতুন সরকারের প্রথম কাজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। যেভাবেই হোক সেটা করতে হবে। গত ৫ জুলাইয়ের পর থেকে ধীরে ধীরে কোটা সংস্কার আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল এবং পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে সে সময়। আবার ভিন্নভাবেও মারা গেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীসহ অসংখ্য মানুষ। তেমনিভাবে সরকার পরিবর্তনের পরও হিংস্রতার শিকার হয়ে মানুষ মারা গেছে এবং যাচ্ছে যার খুব কম খবরই আসছে সংবাদ মাধ্যমে।

তাই সমাজে দ্রুত স্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন পরবর্তী পরিস্থিতি দ্রুত পরিসমাপ্তি টানার চাপ আছে সরকারের ওপর। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য এখন বড় হুমকির মধ্যে পড়েছে এই হিংস্রতার উন্মাদনায়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে, জনপদে জনপদে মানুষকে জেগে থাকতে হচ্ছে ডাকাতের আক্রমণ রুখতে। নাগরিক সমাজের দিক থেকে ধৈর্য ও আত্মসংযমের পরিচয় পাওয়া গেল না একেবারেই। লুটপাট যেরকম উৎসবের সাথে হয়েছে, যেভাবে ভাস্কর্য আর মূর্তি ভাঙ্গার হিড়িক পড়েছে তাতে এই বিজয় হাতছাড়া হওয়ার শংকা দেখা দিয়েছে।

দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে, স্বাভাবিক স্থিতি ফিরে আসবে – এটা হলো প্রত্যাশা। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। কারণ পুলিশ নেই এবং আদেশের পর ফিরতে শুরু করলেও তারা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঢাকাসহ সারাদেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নেমেছে ছাত্র ছাত্রীরা যা কারও কাছেই স্বাভাবিক কাজ নয়।

বিনা বাধায় পুড়িয়ে দেয়া ও অস্ত্র লুটের পর ঢাকার ২৯টি থানাসহ দেশের ৪১৭টি থানায় সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এখন তারা পুলিশের হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। অস্ত্র তো শুধু থানা থেকেই যায়নি, গেছে কারাগারগুলো থেকেও। অংসংখ্য দাগী অপরাধীও জেলগুলো থেকে বেরিয়ে গেছে যার প্রভাব পড়বে আগামী দিনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে।

গণআন্দোলনের যে চিত্র চোখে পড়লো তার এক পিঠ আনন্দঘন হলেও আরেকটি পিঠ ছিল ভয়ংকর বেদনার। এবং সেটা কীভাবে কত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায় সেটাই সবচাইতে বড় বিবেচনার বিষয়।

আরেকটি বড় বিষয় অর্থনীতি। নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে।

অর্থনীতির চাকা বন্ধ হলে ক্ষতি হতেই থাকে। এই চাকা যেকোনো মুহূর্তেই বন্ধ করা যায়। কিন্তু চালু করতে সময় লাগে। ফলে ক্ষতির পুরো হিসাব এখনই করা যাবে না। তবে ক্ষতির অঙ্ক অনেক বড় হবে। ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়।

গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ও কার্যক্রম মন্থর হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কারণে বহু কারাখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। সরকার পতনের এক সপ্তাহ আগে ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ছাত্র আন্দোলন, কারফিউ এবং দেশজুড়ে ইন্টারনেট না থাকায় দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। সরকার পতনের পর এই ক্ষতি অনেক বেশি বেড়েছে। কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও আগ্নি সংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে গেছে। অর্থনীতি এমনিতেই করোনার পর থেকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দায় এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অস্থিরতায় অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের ভাবমূর্তি। দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন তারা অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন। তাদের আস্থা ফেলাতে হবে সবার আগে। ইতিমধ্যেই পোশাক খাতের অনেক ক্রয়াদেশ চলে গেছে অন্যদেশে। অনেক আইটি কোম্পানি সরে গেছে বাংলাদেশ থেকে।

তাই এ ধরনের সংকট যাতে না হয় সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে। অর্থনীতির স্বার্থেই অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও অর্থনীতিতে যেসব চাপ থাকায় জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়, এসব বিষয় পরিকল্পনায় এনে সরকারের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ